কভিডের আগে বিদেশি ক্রেতারা অন অ্যারাইভাল (আগমনী) ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারতেন। পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সুপারিশপত্র নিয়ে তাঁরা এ ভিসা পেতেন। কিন্তু করোনার কারণে দেড় বছর ধরে এ সুযোগ বন্ধ। পোশাকশিল্পের স্বার্থে এ ব্যবস্থা আবার চালু করার দাবি জানিয়েছে এ খাতের শীর্ষ সংগঠনটি। তাদের মতে, বিমানবন্দরে ঝামেলামুক্তভাবে বিদেশি ক্রেতারা দেশে আসতে পারলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে।
সম্প্রতি বিদেশি ক্রেতা এবং তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অতিথিদের আগমনী ভিসা পুনরায় প্রদান করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশকে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।
সূত্রে পাওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়কারী এবং এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশিরা দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএর দেওয়া সুপারিশপত্রের মাধ্যমে অন অ্যারাইভাল ভিসা পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি এই ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ ভ্রমণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অথচ ক্রেতাদের ভিসা প্রদান সহজ ও ঝামেলামুক্ত করা সম্ভব না হলে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ প্রদানে নিরুৎসাহ হবেন; যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরো জানান, বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সামনের বড়দিন উপলক্ষে উৎসবমুখর এসব দেশের ক্রেতাদের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশে। কিন্তু বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নানা বাধা পেরিয়ে দেশে ঢোকা বেশ ঝামেলার। বিদেশি ক্রেতাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ থাকায় অনেক ক্রেতা বিমানবন্দরের হয়রানি এড়াতে বাংলাদেশে আসতে চান না। আলোচনার জন্য তাঁরা দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সিঙ্গাপুর কিংবা ব্যাঙ্ককে আসতে অনুরোধ করেন। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি যেমন সংকটে পড়ছে, একই সঙ্গে খরচও বাড়ছে উদ্যোক্তাদের।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শহীদউল্লাহ আজীম বলেন, ‘বিমানবন্দরে ক্রেতাদের নানা হয়রানি হতো বলে বিজিএমইএ তার ক্রেতাদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা দিতে সুপারিশ করত। কিন্তু বর্তমানে এটা বন্ধ আছে। আমাদের সুপারিশে ক্রেতাদের ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা প্রয়োজন। বিদেশি ক্রেতাদের আগমন সহজ করা না হলে তাঁরা ক্রয়াদেশ দিতে যেমন নিরুসাহ হবেন, তেমনি করোনার প্রভাব কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হবে।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা কভিডের প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশগুলোর মর্কেট-শপিং মল খুলছে। সামনে বড়দিন ও গ্রীষ্ম মৌসুম ঘিরে পোশাকের বিপুল চাহিদা। এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে সদ্যোবিদায়ি মাস অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে বাধাগ্রস্ত হলে প্রত্যাশিত রপ্তানি আয়ের এই প্রবাহ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাঁরা অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোতে নজর দেবেন। চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ক্রেতাদের যে সুবিধা আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বঞ্চিত হব। তাই এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানাই।’
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে বিমানবন্দর থেকে আগমনী ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও এখনো বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়। তবে আগের স্বাভাবিক প্রথা অনুসারে অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ আছে। আর বিজিএমইএর সুপারিশে ব্যবসায়ী হিসেবে বিদেশি ক্রেতাদের দেওয়া সুবিধা বন্ধ আছে কি না বিষয়টি আমার জানা নেই।’
Leave a Reply